Surongo: A Tale of Love and Conflict
...
Table of Contents
Plot
এই সিনেমার মূল নায়ক হচ্ছে গল্প, যার মধ্যে ক্যারেক্টার গুলো উপাদান মাত্র। একটি থ্রিলার ধর্মী গল্প, যা মূলত রোমান্টিকতার মোড়কে আবর্তিত হয়। গল্পটি শুরু থেকেই একজন মানুষের জবানবন্দীর আদতে বর্ণনা করা। এখানে কোন নায়ক বা নায়িকা নাই। আমরা নায়ক নায়িকা বলতে যা বুঝি তা হলো : তারা খুব ভাল, তাদের কোন দোষ নাই, তারা ফুলের মত পবিত্র, এখানে আসলে তা না। এখানে কেউই পুরো ভাল না আবার খারাপ না। বেশি খারাপ, কম খারাপ বলা যেতে পারে যা আপেক্ষিক। যেমন একটা ক্যারেক্টার থাকে, আমরা পরে জানতে পারি তার বেশ রকমের চারিত্রিক দূর্বলতা আছে। কিন্তু সেও শুরুতে নিজেকে শুরুতে কন্ট্রোল করতে চেয়েছে, দুরুত্ব তৈরী করতে চেয়েছে। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে সেটা ট্রিগার্ড হয়ে আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে। অর্থাৎ সব খারাপ মানুষই সব সময় খারাপ হয় না। ডিটেইল এর উদাহরণ যদি বলি, তবে এখানে মাসুদ (নিশো) থাকে ইলেক্ট্রিশিয়ান। এবং তার এই পেশাই ঘটনাক্রমে, তাকে বরফকলের টেকনিশিয়ান বানায়। কিন্তু বরফ কলের ইলেকট্রিক কাজ শেষ হয়ে গেলে, উপায় না পেয়ে মাটি কাটার কাজ হাতে নেয়। আর মাটি কাটাই হয়, তার সুড়ঙ্গ বিদ্যার হাতে খড়ি। ইভেন আর ইলেকট্রিশিয়ান হবার কারনে সে নিপুন দক্ষতায় সুড়ঙ্গের ভেতর লাইটের ব্যবস্থা করে, যা দেখে পুলিশরাও চমৎকৃত হয়।
Characters
আফরান নিশো, তমা মির্জা, মোস্তফা মনোয়ার, শহীদুজ্জামান সেলিম
Performances
প্রত্যেকটা ক্যারেক্টারের অভিনয় বেশ ভাল, pretty solid, আরফান নিশো, তিনি আসলেই ভাল অভিনেতা। তিনি প্রত্যেকটা মুহুর্তের আবেদন অনুসারে অভিনয় করে গেছেন। অভিনয় দক্ষতা বুঝা যায়, চিল্লাপাল্লা আর যাত্রাপালার মত লং ডায়লগে নয়, বরং নৈশব্দে। অর্থাৎ একটা মানুষ যখন কোন কথা বলে কিংবা না বলে নিঃশব্দে, এক্সপ্রেশন দিয়ে ঘটনার তীব্রতা বুঝাতে পারেন, দর্শকের সাথে কানেক্ট করতে পারেন, সেটাকে বলে অভিনয়। একটা দৃশ্যে তীব্র কষ্টে, তার বুক ফাটা নিঃশব্দ আর্তনাদ আর দম বন্ধ হবার যোগাড়, তিনি শরীরী ভাষায় চমৎকারভাবে সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন। দর্শক হিসেবে তার কষ্টের তীব্রতা আমাকে স্পর্শ করেছে। তমা মির্জাও দারুণ অভিনয় করেছেন। তার প্রতি আপনার রাগ, অনুরাগ, ঘৃণা কিংবা মায়া যাই কাজ করে, সেটা তার অভিনয়ের গুনেই। কোথায় যেন শুনেছিলাম, দিঘী কে সরিয়ে নাকি তাকে নেওয়া হয়েছে। আমার মতে দিঘী কখনোই এতটা শক্তিশালী অভিনয় ফুটিয়ে তুলতে পারত না। এছাড়া অন্য ক্যারেক্টারগুলো ও বেশ ভাল অভিনয় করেছে, অভিযোগের সুযোগ নেই।
Trailer
Direction
মেকিং এর কথা বললে এক কথায় অসাধারণ। সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্য খুবই যত্নের সাথে ফুটিয়ে তোলা। ক্যামেরার কাজ এত দূর্দান্ত এবং লোকেশন তো ভয়ানক রকম সুন্দর। আমাকে যদি স্বপ্নের একটি বাড়ী কল্পনা করতে বলত, আমি তো কল্পনা করতাম পাহাড়ের পাদদেশে, লেকের ধারে একটা দোচালা বাড়ী। হয়ত আমার কল্পনার বাড়ি সুইজারল্যান্ডে কিংবা লাদাখের মত যায়গায় হইত, রায়হান রাফী সেইটা বাংলাদেশে হইলে কেমন হইত তার রূপায়ন করেছেন। সে যে সুড়ঙ্গ তৈরী করেছেন, আমি ভাবলাম উনি হয়ত একটা গর্ত করেই জোড়াতালি দিবেন, কিন্তু বিশাল একটা সূড়ঙ্গ সত্যিই করে ফেলেছেন। ভুড়ি ওয়ালা পুলিশকে সেই সুড়ঙ্গে পার করেছেন, ব্যাটার যখন হাপাতে হাপাতে দম বন্ধ হবার যোগাড়, তার এক্সপ্রেশনেই symbolise করে পুরো বিষয়টি আসলে কতটা Exhausting ছিল!!! রায়হান রাফির শিল্প রুচির প্রশংসা করতেই হয়।
Music
বিরক্তিকর কোন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিলনা। সবগুলো খাপে খাপ মনে হয়েছে। গানগুলো আন্ডাররেটেড এবং সুন্দর। নুসরাত ফারিয়ার ট্যাকা গানটা প্রথমে ভাল্লাগেনি, মুভি দেখার সময় এঞ্জয় করছি। আর সবশেষে, টাকা পাওয়ার পর ওইযে "ও বন্ধু লাল গোলাপি" গানটা সিলেক্ট করছিলো কে! তারে সালাম! পুরো হলের মানুষ তালি দিচ্ছিলো, এত পার্ফেক্ট গেছে সিনের সাথে গানটা!
Cultural Impact
প্রথমেই বলি সিনেমা জিনিষটা হল এন্টারটেইনমেন্ট, এখানে জোরাজুরির কিছু নাই। প্রশ্ন হল আপনি কিসে এন্টারটেইনমেন্ট পান? এক শ্রেনীর দর্শক আছে, যারা ওভার দ্যা টপ জিনিষ পছন্দ করেন। যেখানে নায়ক অতিমাত্রায় নায়ক, অতি সুন্দর, অতি অসাধারণ। যিনি পর্দায় আসলে সব স্লো মোশান হয়ে যায়, একাই সব গুন্ডাদের পিটায়ে তক্তা বানায়ে ফেলান। গুন্ডাদের হাজারো গুলি তার গায়ে লাগে না, লাগলে হাইয়েস্ট হাতে লাগে, আর প্রত্যেক গুলি গুন্ডাদের ঘায়েল করে ফেলে। এই সব সিনেমার দর্শকদের কাছে, সিনেমা তাদের ফ্যান্টাসি ল্যান্ডের টিকেট। তার রঙ্গিন জীবনের কল্পনার প্রতিচ্ছবি হয় নায়কের মাধ্যমে, a way of escaping from reality. এই সুড়ঙ্গ সিনেমা তাদের কাছে নাটক মনে হবে… কারন স্লো মোশান নাই, চৌধুরী সাহেব বলে চিল্লায়া বিশাল যাত্রাপালা মার্কা ডায়লগ নাই… নায়ক সাধারণ মানুষের মতই। এমন নায়ক তো রাস্তা ঘাটেই দেখা যায়, টিকেট করে দেখার কি আছে?? তারা দেখলে খুব একটা মজা পাবেন না, মনে হবে আরে এ তো নাটক!! আবার এক শ্রেনীর দর্শক আছে, যারা সিনেমা বলতে জীবনের প্রতিচ্ছবি বুঝেন। যারা সিনেমা দেখে নিজের সাথে রিলেট করতে চান, নিজের বাস্তবতা বা নিজের দেখা বাস্তবতার সাথে মিল খুঁজেন, ডেপথ খুঁজেন, মিনিং খুঁজেন তারা হয়ত মজা পেতে পারেন… যেমন ধরেন, মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রির যে মুভিগূলো, যেখানে নায়ক নায়িকার থেকে গল্পই মুখ্য… কুমবালাঙ্গী নাইটসের মত ছবিতে আনন্দ পান, তারা দেখে হয়ত আনন্দ পেতে পারেন। আমি ধরণ বুঝাতে উদাহরণ টানলাম… আপনার মালায়লান স্লো বার্ণ মুভি ভাল লাগে বলেই যে সুড়ঙ্গ ভাল লাগবে, কোন গ্যারান্টি নাই। দিন শেষে কথা হল এন্টারটেইনমেন্ট, আপনি টাকা খরচ করবেন, যেটায় আনন্দ পান। সবার সব কিছু ভাল লাগবে না এটাই চিরন্তন সত্যি।
Controversy
❝পরান❞ সিনেমার পর এ মুভিতে রায়হান রাফীর কাছে কালার গ্রেডিং এ একটু এক্সপেকটেশন ছিলো। পূরণ হয়েছে তবে সম্পূর্ণ হয়নি৷ প্রথম কথা হল এটা কোন ভাবেই পরিবার নিয়ে দেখতে যাবার মত সিনেমা নয়। এখানে কিছু দৃশ্য আছে, যেটা ঘটনার তীব্রতা এবং অভিনেতাদের রিএকশন বোঝানোর জন্য পরিচালক ইনক্লুড করেছেন। কিন্তু ১৬ বছরের কম কেউ তার বাবা মায়ের সাথে এসে যথেষ্ট বিব্রত হবার সম্ভাবনা আছে.. একটা ১৬+ ওয়ার্নিং দেওয়া উচিত ছিল। আর দ্বিতীয় হাফে, সিনেমা কিছুটা স্লো হয়ে যায়। যেটা অনেকের কাছে বোরিং লাগতে পারে। তবে ঝড়ের আগে যেমন সব কিছু শান্ত হয়ে যায়, এরপর কাঁপিয়ে ঝড় আসে, এখানেও অনেকটা তাই মনে হয়েছে। এখন এটা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত (রানটাইম বাড়ানোর জন্য) আমি জানি না।
Conclusion
সুড়ঙ্গ সিনেমার গল্প যথেষ্ট ভালো ছিলো (অনেক বেশি ভালো তা না।) সাব-প্লট দিয়ে সিনেমার গল্প শুরু হয়। সিনেমা গল্পের মূল অংশে পৌঁছাতে অনেক বেশিই সময় নিয়েছে। শেষের দিকের কিছু ঘটনা পূর্ব থেকেই ধারণা করতে পেরেছি তাই এটা মিস্ট্রি থ্রিলার মনে হয়নি। সমাপ্তি গুড এনাফ, দর্শক হিসেবে খুশি হয়েছি।